ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিত্রনায়ক সোহেল হত্যা: দীর্ঘ ২৩ বছর পর প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২
  • ১০১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২৩ বছর পর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই আশীষ রায়ের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এ সময় তাঁর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।

রাত ১১টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে র‌্যাব।

আশীষ চৌধুরী সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এই মামলার দ্বিতীয় আসামি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আশীষ বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ছিলেন।

গতকাল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাসাটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ’

সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের সময় আশীষ চৌধুরী গুলশান এলাকায় ডিস ব্যবসা করতেন। তখন গড়ে তুলেছিলেন ডিসলাইনভিত্তিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। পরে ডিসের পাশাপাশি এভিয়েশন ব্যবসাও শুরু করেন তিনি। কিছু নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত হন তিনি।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সোহেলের

ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাদানুবাদ হয়। প্রতিশোধ নিতে তাঁকে হত্যা করা হয়।

ঘটনার রাতে সোহেল চৌধুরী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবার তিনি ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান সিদ্দিকী গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।

এই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ পাঠানো হয়। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো বেআইনি দাবি করে ওই আইনের দুটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে আদনান সিদ্দিকী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের আদেশ কেন বেআইনি হবে না তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। একই সঙ্গে তিন মাসের জন্য মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।

জানা যায়, একটানা ১২ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর ২০১৫ সালে আদনান সিদ্দিকীর করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে এর আগে দায়ের করা রুল খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেন। এই আদেশের পর মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু কোন অজানা কারণে ওই রায় ও হাইকোর্টের আদেশ আর বিচারিক ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেনি। হাইকোর্টেও গায়েব হয়ে যায় আদেশের নথি।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হারুন ভূইয়া রাসেল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে রিট আবেদন করেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চিত্রনায়ক সোহেল হত্যা: দীর্ঘ ২৩ বছর পর প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

আপডেট টাইম : ১০:২৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২৩ বছর পর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই আশীষ রায়ের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এ সময় তাঁর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।

রাত ১১টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে র‌্যাব।

আশীষ চৌধুরী সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এই মামলার দ্বিতীয় আসামি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আশীষ বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ছিলেন।

গতকাল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাসাটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ’

সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের সময় আশীষ চৌধুরী গুলশান এলাকায় ডিস ব্যবসা করতেন। তখন গড়ে তুলেছিলেন ডিসলাইনভিত্তিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। পরে ডিসের পাশাপাশি এভিয়েশন ব্যবসাও শুরু করেন তিনি। কিছু নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত হন তিনি।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সোহেলের

ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাদানুবাদ হয়। প্রতিশোধ নিতে তাঁকে হত্যা করা হয়।

ঘটনার রাতে সোহেল চৌধুরী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবার তিনি ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান সিদ্দিকী গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।

এই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ পাঠানো হয়। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো বেআইনি দাবি করে ওই আইনের দুটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে আদনান সিদ্দিকী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের আদেশ কেন বেআইনি হবে না তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। একই সঙ্গে তিন মাসের জন্য মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।

জানা যায়, একটানা ১২ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর ২০১৫ সালে আদনান সিদ্দিকীর করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে এর আগে দায়ের করা রুল খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেন। এই আদেশের পর মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু কোন অজানা কারণে ওই রায় ও হাইকোর্টের আদেশ আর বিচারিক ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেনি। হাইকোর্টেও গায়েব হয়ে যায় আদেশের নথি।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হারুন ভূইয়া রাসেল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে রিট আবেদন করেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন।